আল হাছিব তাপাদার:: এম জাকির হোসেইন নামটির সাথে সিলেটের মানুষ অতি পরিচিত। অনেকে ব্যক্তি এম জাকির হোসেইনকে সরাসরি না চিনলেও নামটির সাথে পরিচিত আছেন।
এম জাকির হোসেইন জকিগঞ্জের সুলতানপুর ইউনিয়নের গঙ্গাজল গ্রামের সন্তান। পিতা আব্দুল লতিফ তাপাদার এলাকার একজন সালিশ ব্যক্তিত্ব। জাকির হোসেইন তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার বড়।
সম্ভ্রান্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাকির হোসেইনের বেড়ে ওঠা জন্ম মাটি জকিগঞ্জেই। এলাকার গণিপুর কামালগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে সিলেট সরকারি কলেজে ভর্তি হন। এখান থেকে এইচএসসি পাশ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেন।
কলেজে লেখাপড়াকালীন সময়েই জড়িয়ে পড়েন জাতীয় ছাত্র সমাজের রাজনীতিতে। নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা দিয়ে এক সময় জাতীয় ছাত্র সমাজের সিলেট জেলার সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর নির্বাচিত হন ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি। কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় তিনি সিলেট নগরীর শাহী ঈদগাহ এলাকায় প্রিন্টিং প্রেস ও ফার্মেসী ব্যবসা করে টাকা দিয়ে রাজনীতির খরচ মেঠাতেন। নিজের অমায়িক আচরণে জনপ্রিয় ছাত্রনেতা নেতা হয়ে উঠেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ জেলেবন্দি থাকাকালে “এরশাদ মুক্তি” আন্দোলন করে কাপিয়ে তুলেন সিলেটের রাজপথকে। পার্টির চেয়ারম্যানের মুক্তি চাইতে গিয়ে হামলা-মামলার শিকার হন।
বর্তমানেও এম জাকির হোসেইন বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুক্ত আছেন। তিনি জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য। জকিগঞ্জ-কানাইঘাট উপজেলায় রয়েছে তাঁর বৃহত্তর রাজনৈতিক বলয়। বিগত কয়েকদিন আগে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সম্মেলনে শতাধিক গাড়ী বহর দিয়ে নেতাকর্মীকে রাজধানীতে পাঠিয়েও সিলেট বিভাগ জুড়ে আলোচনায় আসেন। র্দীঘদিন থেকে জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের জাপা ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রিয় নেতা এম জাকির হোসেইনকে নিয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন। পার্টির কাছে দাবী জানাচ্ছেন এ আসনে আগামী নির্বাচনে যাতে জাকির হোসেইনকে প্রার্থী দেয়া হয়। সৎ ও নিরব সমাজসেবক হিসেবে রাজনৈতিক অঙ্গনের বাইরেও সাধারণ মানুষের প্রিয়জন, প্রিয় নাম এম জাকির হোসেইন।
২০০৩ সালে জীবনের তাগিদে এম জাকির হোসেইন সস্ত্রীকে নিয়ে স্বপ্নের দেশ যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে পাড়ি জমান। সেখানে গিয়ে শ্রমিক হয়ে প্লাস্টিক কোম্পানীতে কর্মজীবন শুরু করেন। কিন্তু তিনি প্লাস্টিক কোম্পানীর শ্রমিক হলেও সব সময় আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন দেখতেন। এক সময় তাঁর স্বপ্ন বাস্তবে রূপ ধারণ করে। তিনি যে প্লাস্টিক কোম্পানীর শ্রমিক হয়ে কাজ করতেন সেই কোম্পানী নিজের সততা, সাহস, পরিশ্রম দিয়ে একসময় ক্রয় করতে সক্ষম হন স্বপ্ন চাষী জাকির। ক্রয়কৃত কোম্পানীর আগের নাম বদল করে নতুন নাম রাখেন ‘জেডএইচকে প্লাস্টিক লিমিটেড’। এতে ধীরে ধীরে তিনি ব্রিটেনের বাঙ্গালী কমিউনিটির শীর্ষ ব্যবসায়ীদের আলোচনায় স্থান পান। বর্তমানে এম জাকির হোসেইনের ‘জেডএইচকে প্লাস্টিক লিমিটেডের পণ্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাজারজাত হচ্ছে। এ কারণে ইতিপূর্বে তিনি ব্রিটেনের অন্যতম একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে বিভিন্ন সময় কৃতৃত্বের সাথে একাধিক খ্যাতি অর্জন করেছেন।
২০১৭ সালের ১৪ মে ব্রিটেনের মিডল্যান্ডে “দেশ ফাউন্ডেশন ইউকে’র” উদ্যোগে তাঁকে বৃটিশ বাংলাদেশী হিসেবে সেরা শিল্পপতি নির্বাচিত করে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহারিয়ার আলম, বৃটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ব্রিটেনের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও ব্যবসায়ী নেতারা।
চলতি বছরের ২৭ জুন তাঁকে বার্মিংহামে বৃটিশ বাংলাদেশি র্শীষ ব্যবসায়ী ঘোষণা করে বার্মিংহামের লর্ড মেয়র ইভনি মস্কিটো তার হাতে অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন। ছাড়াও ব্রিটেন থেকে তিনি একাধিক অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছেন। তাঁর অব্যাহত সফলতার কারণে বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে বলে একাধিক বিশিষ্টজন মত দিয়েছেন।
লন্ডনে থাকলেও দেশের অসহায় মানুষের প্রতি তাঁর আবেগ আর ভালোবাসার শেষ নেই। অসহায় মানুষ যেন তাঁর আত্মার আত্মীয়। এলাকার তথা দেশের যেকোন দুর্যোগকালীন সময়ে তিনি কোন প্রকার প্রচার ছাড়াই নিরবে মানুষের কল্যাণে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। সম্প্রতি সময়ে জকিগঞ্জের বন্যায় তিনি নিরবে ত্রাণ বিতরণ করেছেন। একমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষে তিনি প্রচার ছাড়াই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে চান এমনটাই তাঁর বক্তব্য। বন্যার সময় জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে তাঁর অর্থায়নে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকলেও মহৎ কাজের সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কিংবা পত্রপত্রিকায় প্রকাশ করতে রাজি হননি তিনি। এর কয়েক বছর আগে প্রলয়ঙ্কারী সিডরে আঘাত হানে বাংলাদেশে। ওই সময় তিনি সিলেটের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে নিরবেই প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অনুদান দিয়েছেন। তিনি অপ্রকাশিত থেকে নিরবেই এলাকার অসুস্থ, বিপদগ্রস্থ লোক, গরীব শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার খরচ, কন্যাদায়গ্রস্থ পিতা-মাতার পাশে দাঁড়ান। তাঁর অনিচ্ছার কারণে সেবামূলক সকল কর্মকান্ডগুলো আড়ালে থেকে যায়।
বিগত বছরের আগস্ট মাসে এম জাকির হোসেইন সংক্ষিপ্ত সফরে সর্বশেষ বাংলাদেশে আসেন। সে সময় তিনি জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের দলীয় নেতাকর্মীসহ আপামর জনতার ভালোবাসায় সিক্ত হন। তাঁকে বরণ করে নিতে জকিগঞ্জ-সিলেট সড়কের বিভিন্ন স্থানে জাপা ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা স্থাপন করে ছিলো শতাধিক তোরণ। জন্মভূমি জকিগঞ্জে এসে তিনি প্রথমে এম জাকির হোসেইন হিফজুল কোরআন প্রতিযোগীতার পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অংশ নেন। বিগত বছরে তাঁর সংক্ষিপ্ত সফরের মূল লক্ষই ছিলো এম জাকির হোসেইন হিফজুল কোরআন প্রতিযোগীতার পুরষ্কার বিতরণীতে অংশগ্রহণ করা। এই প্রতিযোগীতার কারণে তিনি জকিগঞ্জের সর্বস্থরের মানুষের মনে সহজে স্থান করে নেন। সর্বমহলেই হন প্রশংসিত। দেশে সফরকালে রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের চাইতে সেবামূলক কর্মকান্ডে বেশী সময় পার করেছিলেন।
জকিগঞ্জের একাধিক গুণীজনের সাথে এম জাকির হোসেইনের সেবামূলক কর্মকান্ড নিয়ে খোলামেলা কথা বলার সময় গুণীজনরা বলেছেন, এম জাকির হোসেইন নিরবে মানবতার সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি না চাইলেও তাঁর মহৎ কাজগুলো পত্রপত্রিকায় তুলে ধরলে সমাজের সম্পদশালী অন্য মানুষরাও নিজেদেরকে মানবতার কল্যাণে নিয়োজিত করবে। একজন রাজনীতিবীদ হিসেবে নয় একজন জনসেবক হিসেবে এম জাকির হোসেইন অসহায়দের মাথার উপর ছাতা হিসেবে পাশে দাঁড়ান। অনেক মানুষ জাকির হোসেনের কাছ থেকে উপকৃত হয়েছেন, জাকির তাঁর কর্মকান্ড পর্দার আড়ালে সম্পাদন করায় অনেকে জাকির হোসেইনের ব্যাপারে ভালো করে জানেনা। সমাজের অন্য দানশীলদের মত জাকির হোসেইন নিজেকে প্রচার না করায় এবং তাঁর মাঝে দানশীল হিসেবে সমাজে প্রতিষ্টিত হওয়ার ইচ্ছা না থাকায় অবদানগুলো অপ্রকাশিত থেকে যাচ্ছে।
একজন জাকির হোসেইনের মানবসেবার কথা সকলের কাছে তুলে ধরলে সমাজের অন্য মানুষরাও নিঃস্বার্থে জাকির হোসেইনের মত মানুষের জন্য কাজ করবে। বর্তমান সময়ে জকিগঞ্জের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে একজন নিঃস্বার্থ সমাজসেবী ও রাজনীতিবীদ জাকির হোসেইনের খুবই প্রয়োজন বলে অনেকে অভিমত দিয়েছেন।
Leave a Reply